প্রকাশ :
রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট। তবে ব্যবসায়ী-কর্মকর্তার যোগসাজশ, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বেশির ভাগ ভ্যাটই আদায় হয় না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আওতায় সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী তালিকাভুক্ত থাকলেও সরকারের খাতায় ভ্যাটের জন্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ। তাদেরও সবাই রিটার্ন দেয় না। তাই ছয় মাসেই রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
ডিজিটাইজেশনের অভাবে ভ্যাট ফাঁকির অবারিত সুযোগ। এমন বাস্তবতায় ভ্যাট কর্তৃপক্ষ তাদের ভ্যাটের আওতায় না এনে বছরের পর বছর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে চলছে। এনবিআরের তথ্য-উপাত্ত, বিভিন্ন জরিপের তথ্য পর্যালোচনা এবং ব্যবসায়ী-কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে ভ্যাটের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দার কারণে যেখানে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, সেখানে নতুন নতুন ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় না এনে আকস্মিক ভ্যাট বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একে ব্যবসায়ীরা অনেকটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসিবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা জানান, দেশে কোটি কোটি ভ্যাট দেওয়ার উপযোগী ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে অল্প করে ভ্যাট আদায় করলেও রাজস্বের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। বরং উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা।
সেদিকে যায়নি এনবিআর। বরং ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়ে সহজে রাজস্ব আদায় করার পথে হেঁটেছে। অথচ ঘোষণার পরই প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। চাপের মুখে সরকার ছয়টি পণ্যের ভ্যাট কমিয়েছে। কিন্তু তাতেও প্রতিবাদ থামছে না ব্যবসায়ীদের।
তারা মনে করছেন, অটোমেশন করে বেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায়ের পথে যাওয়া উচিত সংস্থাটির। না হলে ব্যবসার মন্দা সময়ে যারা নিয়মিত ভ্যাট দেয় তাদের লোকসান হবে। ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হ বে। আর সরকারও কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট পাবে না।
জানা যায়, ২০২১ সালের মে মাসে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও সাভারের ২৫টি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে। এসব মার্কেটের ১৫ হাজার ৪৮২টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ১২ হাজার ৮৭১টি প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। অর্থাৎ ৮৮ শতাংশ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট ফাঁকি দেয়। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ে ভ্যাট সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলেও তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট আদায় করতে পারছে না এনবিআরের ভ্যাট শাখা।