নোটিশ
পরিক্ষামুলক সম্প্রচার ।। Test AiR ।। পরিক্ষামুলক সম্প্রচার ।। একটি নিউজ মিডিয়া হাউজের জন্য অফিস এডমিন পুরুষ-মহিলা আবশ্যক ।। কাজের বিবরণী লামিয়া রিত্রুুটিং এজেন্সীর একটি প্রতিষ্ঠান ( বিবিএন নিউজ ) জন্য কিছু স্যংখক পুরুষ - মহিলা অফিস এডমিন নিয়োগ করা হবে । সকাল ৯টা থেকে ৭ টা এইচ এসসি / স্নাতক ১) অফিস ম্যানেজ করা ২) অফিসিয়াল মেইল চেক করা/ মেইল করা / ফেইসবুক নটিফিকেশন চেক করা ৩) কাস্টমার রিলেশন করা ৪) ফোন কল রিসিভ করা ৫) নিউজে ভয়েস ওভার জানলে বিশেষ যোগ্যতা হইবে । যোগাযোগ : হেড অফ নিউজ : 01997301375 সৈৗদিতে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চান ? বাংলাদেশের জন্য রেমিটেন্স যোদ্বা হতে চান ? তাহলে আজই যোগাযোগ করুন ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র রামপুরাস্থ মেসার্স লামিয়া ওভারসীজের সাথে, ফোনে যোগাযোগ করতে 01972881111 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত, আহত, নিখোঁজ অথবা গুম ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে তৈরি করা এ পোর্টালের নাম দেওয়া হয়েছে ‌'রেড জুলাই ডট লাইভ' । এখন থেকে বিবিএন নিউজ পরিবার রেড টু জুলাই এর সাথে কাজ করবে । www.redjuly.net

ইসির নতুন মানদণ্ড ৫১ হাজার পৃষ্ঠার আবেদন ফেল, মাত্র ১৭২ পৃষ্ঠা পাস!

Rakibul Islam

প্রকাশ :


নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক বাছাইয়ে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘জাতীয় লীগ’-এর নিবন্ধন অনুমোদন নানা মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মাত্র ১৭২ পৃষ্ঠার নথি জমা দিয়েই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হওয়া দলটি নিয়ে ‘অর্থনৈতিক লেনদেন’-এর অভিযোগ উঠেছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যেখানে আম জনগণ পার্টি ৫১ হাজার পৃষ্ঠা এবং অন্যান্য দল হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথি জমা দিয়েও নিবন্ধনের জন্য লড়ছে, সেখানে জাতীয় লীগের এই ‘অলৌকিক’ উত্তরণ ইসির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

ইসির তথ্যানুসারে, দীর্ঘ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের প্রাথমিক বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জাতীয় লীগ নামে দুটি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া আরও তিনটি দলকে অধিকতর যাচাই-বাছাই এবং নয়টি দলকে পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

তবে এনসিপিকে নিয়ে তেমন প্রশ্ন না থাকলেও জাতীয় লীগকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মাত্র ১৭২ পৃষ্ঠার নথি জমা দিয়েই দলটি ইসির প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, যা নিয়ে উঠেছে ‘অলৌকিক উত্তরণ’-এর অভিযোগ। কারণ, এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দল ৪৩ থেকে ৫১ হাজার পৃষ্ঠার নথি জমা দিয়েও নিবন্ধন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশনের ভেতরেই গুঞ্জন চলছে—জাতীয় লীগের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এছাড়া দলটি যেসব শর্তে নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে, তা নিয়েও রয়েছে তীব্র বিতর্ক। খোদ দলটির সভাপতির বক্তব্যেই সেই শর্তগুলো নিয়ে নতুন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

নথিপত্র অনুযায়ী, জাতীয় লীগের যাত্রা শুরু পাকিস্তান আমলে—১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। দলটির প্রধান উদ্যোক্তা ও নেতা ছি

বিজ্ঞাপন

লেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান। দল গঠনের সময় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কোনো বিধান ছিল না। জাতীয় লীগের প্রথম প্রতীক ছিল ‘লাঙ্গল’।

১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আতাউর রহমান খান ঢাকা-৩ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৩)-এ একই প্রতীকে ঢাকা-১৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাকশালে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর বাকশাল বিলুপ্ত হলে আতাউর রহমান পুনরায় জাতীয় লীগ সংগঠিত করেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-২১ আসন থেকে জয়ী হন। একই নির্বাচনে কুমিল্লা থেকে মফিজুল ইসলামও লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৮৩-৮৪ সালে আতাউর রহমান সাত দলীয় জোটের অন্যতম সদস্য হিসেবে এরশাদ সরকারের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। কিন্তু পরে মত পরিবর্তন করে ওই সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। ফলে জাতীয় লীগ কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়। আতাউর রহমান ১৯৮৪ সালের ৩০ মার্চ এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে ছিলেন।

জাতীয় লীগের চেয়ারম্যানের বক্তব্য ও নথিপত্রের দাবি

জাতীয় লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বা অন্য কোনো নেতারই কোনো রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করার ক্ষমতা নেই। তার দাবি, দলের নিয়মিত সম্মেলন হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রয়াত নেত্রী আমেনা বেগমের নাম উল্লেখ করে বলেন, তার বিষয়ে উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য তথ্যসূত্রে দলের সঠিক ইতিহাস ও ধারাবাহিকতা পাওয়া যাবে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, জাতীয় লীগ ২০১৭ এবং ২০২২ সালে ইসিতে আবেদন করেছে। তবে নিবন্ধন আইন চালুর পর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তারা আবেদন করতে পারেননি। তিনি জানান, ২০১০ সাল থেকে তিনি দলের দায়িত্বে আছেন।

মাত্র ১৭২ পৃষ্ঠার নথি প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, প্রথমবার তারা ১৭২ পৃষ্ঠা জমা দেন, এরপর ঘাটতি পূরণের জন্য আরও ৮৯ পৃষ্ঠা এবং সর্বশেষ ১০৯ পৃষ্ঠাসহ মোট ৩৭০ পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। দলটি নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা ৭-এর ‘ক’ ধারায় আবেদন করেছে। এই ধারায় পূর্বে সংসদ সদস্য থাকা (আতাউর রহমান খানসহ দুজন) দলের জন্য সারাদেশে অফিস স্থাপনের বাধ্যবাধকতা কম ছিল। বর্তমানে তাদের দাবি অনুযায়ী ৩০টি জেলায় কমিটি এবং ৭০-৮০টি উপজেলায় সংগঠন রয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ জেলা অফিস রয়েছে শুধু পটুয়াখালী ও বাউফলসহ কয়েকটি স্থানে।

আতাউর রহমান খানের নেতৃত্ব ও দলীয় ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে প্রশ্নে তিনি বলেন, আতাউর রহমান খান সামরিক সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী হলেও দল বিলুপ্ত হয়নি। তার মৃত্যুর পর দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আমেনা বেগম ১৯৮৪ সালে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে সংগঠন পুনর্গঠন করেন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে আবদুস সবুর, মুজাহিদুল ইসলাম, আজারিল হালদার এবং সর্বশেষ মাহবুবুল আলম সভাপতির দায়িত্ব নেন। চেয়ারম্যানের দাবি, এই নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার সব কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের গেজেট প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ-টু-জেড সব তথ্য ও প্রমাণ জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে, তবে এই মুহূর্তে কোনো নথি প্রকাশ করতে তিনি অপারগ।

দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ‘বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন’ হয়েছে—এমন অভিযোগ সম্পর্কে মাহবুবুল আলম জোরালোভাবে অস্বীকার করেন। তার বলেন, ‘কোনো লেনদেন নাই... আমাদের তো কোনো টাকা নাই। আমাদের অফিস চালাইতেও কষ্ট হয়।’ তিনি আরও বলেন, দলের ব্যাংক হিসাব ও সদস্যদের চাঁদাসহ সব আর্থিক তথ্য যে কেউ যাচাই করতে পারবেন।

কমিশনের অভ্যন্তরীণ সন্দেহ ও বিতর্ক

নির্বাচন কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ও দল নিবন্ধন যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ঢাকা পোস্টকে জানান, নতুন দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জাতীয় লীগ কখন যে, ঢুকে গেলো সেটা বলা মুশকিল। শুধু একজন সাবেক সংসদ সদস্য এই দলের প্রতিষ্ঠা ছিলেন সেটা আমলে নিয়েই কমিশন দলটিকে চূড়ান্ত করেছে। বাস্তবিক অর্থে তাদের সেরকম কোনো নথিপত্র ছিল না এবং এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের সাথে বর্তমান দলের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটা জানা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই দলটির বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন, বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে মানলে জাতীয় লীগ নামক দলটির নিবন্ধন পাওয়ার কথা নয়।

বিধিবিধানের আলোকে কয়টি দল নির্বাচন কমিশনের শর্ত মেনেছে এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের যাচাই-বাছাইয়ে দুটি দল কমিশনের পরিপূর্ণ শর্ত প্রতিপালন করেছে। একটি হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি, অন্যটি হচ্ছে আম জনগণ পার্টি। কমিশন নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করে নিবন্ধন দিলে এই দুটি দল ছাড়া অন্য কোনো দলের নিবন্ধন পাওয়ার কথা না। কিন্তু কমিশন নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে বিধিবিধানের আলোকে নিবন্ধন কার্যক্রম করছে না। হয়ত ভেতরের তথ্য এখন না এলেও পরবর্তী সময়ে ঠিকই প্রকাশ হয়ে যাবে। এজন্য কমিশনের উচিত, আইনের মধ্যে থেকে কাজ করা।

জাতীয় লীগের ধারাবাহিকতা নিয়ে এনসিপির প্রশ্ন

সম্প্রতি সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশন ‘বাংলাদেশ জাতীয় লীগ’ নামে একটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় লীগের প্রতিষ্ঠাতা আতাউর রহমান খান ১৯৯১ সালে মারা যান এবং তার ছেলে ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান বিএনপিতে যোগ দেন। এরপরে কীভাবে দলটির ধারাবাহিকতা ছিল?

তিনি বলেন, নিবন্ধন দরখাস্তে ব্যবহৃত প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানার (টানপাড়া আটি, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ) কোনো অস্তিত্ব নেই। ওই দলের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। নেতৃত্বকে কেউ চেনে না। মাঠে কোনো কর্মসূচি নেই। ইসির প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রধান কার্যালয় ফিজিক্যালি ভিজিট করার কথা। কীভাবে ইসি এই কার্যালয়কে ‘ওকে’ পেলেন এবং এমন একটি দলের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি?

অধিকতর তদন্তে ১০ দল

এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এজন্য দলগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ে আবারও মাঠ পর্যায়ের তথ্য পুনঃযাচাই করতে যাচ্ছে। ১০ অঞ্চলের জন্য ১০টি কমিটি গঠন করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই কমিটি মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য/মতামতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপূর্ণতা, যথাযথ মন্তব্যে ঘাটতি থাকায় যাচাই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১০টি দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করবে। ইসির বার বার তদন্তের নামের হয়রানিমূলক বলেও দাবি করেছে কোন কোন দল।

যে ১০টি দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য পুনঃতদন্ত করা হবে

আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করার জন্য ১০ অঞ্চলে একজন উপসচিব, একজন অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (সংশ্লিষ্ট অঞ্চল) এবং একজন অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে (সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আওতাধীন) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

১০ দলের অধিকতর তদন্তে আরও ৭ কমিটি

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা দলগুলোকে তদন্তের নামে একের পর এক কমিটি করছে নাসির উদ্দিন কমিশন। নতুন করে গত ১৪ অক্টোবর ১০টি নতুন দলের কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে পুনর্তদন্তের জন্য আরও ৭টি কমিটি গঠন করেছে ইসি। এই কমিটিতে ২১ জন কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও খুলনা অঞ্চলে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পুনরায় যাচাই-বাছাই করতে এই সাত কমিটি কাজ করবে।

তিন দলের তদন্তে আলাদা কমিটি ইসির

গত ১৪ অক্টোবর নিবন্ধন চূড়ান্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও ফের তদন্তের মুখে পড়ছে তিনটি নতুন রাজনৈতিক দল। দলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ)। দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি, সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব ও ধারাবাহিক কার্যক্রম যাচাইয়ে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।

নতুন দল নিবন্ধনের শর্তাবলি

আইন অনুযায়ী, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটি এবং ১০০ উপজেলা কমিটি থাকতে হয়। এছাড়া, প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকা আবশ্যক। যাচাই ও দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর সব ঠিক থাকলে ইসি দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ দেয়।

বর্তমানে ইসিতে ৫২টি দল নিবন্ধিত রয়েছে (আওয়ামী লীগসহ)। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার পর মোট ৫৬টি দল নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণে ব্যর্থতা বা আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো— বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালত জামায়াতে ইসলামী ও জাগপার নিবন্ধন ফিরিয়ে দিলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।

দল নিবন্ধনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সচিব

এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ দুটি দল শর্ত পূরণ করেছে। তিনি জানান, তিনটি দলের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। আর ৯টি দলের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হবে এবং ৭টি দলের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।

ইসি সচিব জানান, নির্বাচন কমিশনে ১৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ২২টি দলের তথ্য মাঠপর্যায়ে তদন্ত করা হয়। আমাদের যাচাই-বাছাইয়ে দুটি দলকে এখন পর্যন্ত যোগ্য মনে হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। এছাড়া ইসির পর্যবেক্ষণ করা হবে আম জনগণ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ)।

যে ৯টি দলের মাঠ পর্যায়ে অধিকতর তদন্ত করার কথা জানিয়েছিলেন সচিব, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ।

সচিবের কথা আর কাজে মিল নেই

গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপনি বলেছিলেন, তিনটি দল কমিশনের পর্যবেক্ষণে থাকবে এবং বাকি নয়টি দলের অধিকতর যাচাই হবে, কিন্তু এখন সব দলকেই অধিকতর যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে?— এমন প্রশ্নে ইসি সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে, তারা সবাই কমিশনেরই লোক। কমিশন শুধু বসে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ভালো কিছু চাওয়ার জন্য এবং তথ্যের অসম্পূর্ণতা দূর করার জন্য মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নেওয়া প্রয়োজন। কয়েকটি দলের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় যাচাই করা দরকার।

বারবার মাঠ পর্যায়ে তদন্তের কারণ হিসেবে আখতার আহমেদ বলেন, বারবার পর্যালোচনা করা লাগছে, কারণ কিছু তথ্যের অসম্পূর্ণতা আছে। তথ্য পর্যালোচনার অসম্পূর্ণতা আছে এবং তথ্য প্রাপ্তিতেও ঘাটতি আছে। সব মিলিয়ে এটিকে নিষ্পত্তি করতেই এই কাজটি দরকার।

আতাউর রহমানের সঙ্গে ‘জাতীয় লীগের’ ধারাবাহিকতা বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই সচিবের

‘জাতীয় লীগ’ দলটির ক্ষেত্রে আতাউর রহমান খানের দায়িত্বের পরের দলের ধারাবাহিকতা ছিল কিনা? এমন প্রশ্নে সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেই বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ফাইনাল সিদ্ধান্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সব বিষয়গুলোর পর্যালোচনায় থাকবে।

ইসির কার্যক্রমে যা বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বর্তমান কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইসির ভেতরেই একটি গোষ্ঠী দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি এটা আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব যে, এখানে ইসির ভেতরে হয়তোবা যেটাকে আমরা সরিষার মধ্যে ভূত বলি, সেটাই মিন করছি।’ তার মতে, ওই বিশেষ রাজনৈতিক দল বা দলগুলোর লোক সেখানে বসে আছে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বা আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে তারা পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিলম্বিত করছে।

ইসির অভ্যন্তরে প্রভাব ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা

অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির রেফারেন্সকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আখ্যা দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নিবন্ধন হবে নীতিমালায় দেওয়া সুনির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া বা বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে, কোনো ব্যক্তি বা সাবেক এমপির রেফারেন্সে নয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমি যেটা শুনেছি যে এখানে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের ভেতরে একটা গ্রুপের সঙ্গে হয়েছে। সেই জন্য হয়ত এই কাজটা এরকম হচ্ছে, উল্টাপাল্টা কাজ হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি।"

এনসিপির প্রসঙ্গ তুলে উদ্বেগ

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এনসিপি সরকারের বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত দল হওয়া সত্ত্বেও তারা ক্রাইটেরিয়া পূরণ করার পরও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে অভিহিত করেন।

সাব্বির আহমেদ বলেন, এটা সার্বিক দিক থেকে ইসির যে সক্ষমতা বা স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে এটা খুবই আতঙ্কের বিষয়।

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

নির্বাচনের ঠিক আগে আগে মাঠ পর্যায়ে দলগুলোকে বার বার হয়রানি করা এবং বার বার তদন্তের বিষয়ে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘এটা হয়রানির চেয়ে বড় আতঙ্কজনক ব্যাপার হলো যে নির্বাচন কমিশন এই ধরনের অনাচারগুলো করছে ঠিক নির্বাচনের আগে আগে।’

তিনি মনে করেন, ইসির এই ধরনের কার্যক্রম আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার গ্রাউন্ড তৈরি করছে। ইসির বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ‘দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার একটি নির্বাচন’-এর ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে আশঙ্কা করেন অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত