প্রকাশ :
লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ তাদের দীর্ঘকালীন নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে বৈরুতের একটি শহরতলিতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হওয়ার ঘোষণা করার পর বিশ্ব নেতারা শনিবার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, ইরান-সমর্থিত এই সংগঠনের প্রধানের হত্যা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্র করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘটনাকে 'ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষপ' বলে স্বাগত জানিয়েছেন।
- ইরান -
ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে নসরাল্লাহর মৃত্যু ‘তাদের ধ্বংস ডেকে আনবে’, ইরানের আইএসএনএ বার্তা সংস্থা তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে।
হিজবুল্লাহর অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা বলেছে যে নসরুল্লাহর কাজ তার মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকবে। "তাঁর পবিত্র লক্ষ্য কুদস (জেরুজালেমের) মুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ," মুখপাত্র নাসের কানানি এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশোে পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -
বাইডেন বলেছিলেন যে নাসরাল্লাহর মৃত্যু ছিল ‘হাজার হাজার আমেরিকান, ইসরাইলি ও লেবাননের বেসামরিক নাগরিকসহ তার বহু শিকারের জন্য ‘ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষেপ’।
ওয়াশিংটন ‘ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে সমর্থন করে এবং বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, এই অঞ্চলে বাহিনীর প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি' 'আরো উন্নত করা হবে'।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন যে নসরাল্লাহ 'একজন সন্ত্রাসী যার হাতে আমেরিকান রক্ত লেগেছে' এবং তিনি 'ইরান ও ই
রান সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেমন হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুথিদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে সর্বদা সমর্থন করবেন।'
প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃস্থানীয় রিপাবলিকানরাও 'গ্রহের সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসীদের একজন' দ্বারা 'রক্তপাত, নিপীড়ন ও সন্ত্রাসের রাজত্বের' অবসানকে স্বাগত জানিয়েছেন।
- রাশিয়া -
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'আমরা ইসরাইলের সর্বশেষ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই' এবং লেবাননে 'অবিলম্বে সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার' আহ্বান জানিয়েছি।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে যোগ করেছে যে এই হত্যাকাণ্ডের ফলে এই অঞ্চলে যে 'দুঃখজনক' পরিণতি হতে পারে তার জন্য ইসরাইল 'সম্পূর্ণ দায় বহন করবে'।
- জার্মানি -
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এআরডি টেলিভিশনকে বলেছেন যে এই হত্যাকা- 'সমগ্র লেবাননের জন্য অস্থিতিশীলতার হুমকি', যা 'ইসরাইলের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনোভাবেই নয়'।
- কানাডা -
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ন'সরাল্লাহকে 'একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেটি নিরপরাধ বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে, যা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ'।
তবে তিনি সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আরো কিছু করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন: 'আমরা এই সংকটময় সময়ে শান্ত ও সংযমের আহ্বান জানাই।'
- ব্রিটেন -
পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, তিনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা রক্তপাতের অবসান ঘটাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি। লেবানন ও ইসরাইলি জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় কূটনৈতিক সমাধান।'
- ফ্রান্স -
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারোট ইসরাইলকে 'অবিলম্বে লেবাননে তাদের হামলা বন্ধ করার' দাবি জানিয়ে বলেছেন, তার দেশে যে কোনো স্থল অভিযানের বিরোধিতা করছে।
ফ্রান্সও 'অন্যান্য কুশিলব, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ ও ইরানকে, অতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।'
- জাতিসংঘ -
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, 'গত ২৪ ঘণ্টায় বৈরুতে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন'।
- হামাস -
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, যার নজিরবিহীন ৭ অক্টোবর ইসরাইল আক্রমণ গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল যা হিজবুল্লাহসহ ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে আকৃষ্ট করেছে। তারা নসরুরাল্লাহর হত্যাকে "একটি কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী কাজ" বলে অভিহিত করেছে৷
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, "আমরা এই বর্বর ইহুদিবাদী আগ্রাসন এবং আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই।"
- ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ -
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস লেবাননের কাছে নাসরুল্লাহ এবং বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য তার "গভীর সমবেদনা" জ্ঞাপন করেছেন, যারা "নিষ্ঠুর ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে পড়েছিল', তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।