প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: ' ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুত ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একের পর এক অভিযান চালালেও তা রোখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শুধু জরিমানা না করে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী কালোবাজারি ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি অথবা বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫ (১) ধারা প্রয়োগ করা হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর আওতায় মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
এই আইনে বেশি মুনাফার জন্য খাদ্যদ্রব্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
* কয়েক মাস ধরেই সয়াবিন তেলের বাজার বিশ্বজুড়ে ঊর্ধ্বমুখী। সর্বশেষ ঈদের আগে ও পরে খোলাবাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে গত ৫ মে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটিই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সয়াবিন তেলের দর। এরপরও খোলাবাজারে নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল মিলছিল না। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সয়াবিন তেল মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ৭ মে খাগড়াছড়ির রামগড়ের সোনাইপুল বাজারের মেসার্স খান ট্রেডার্সের মালিক ফজলুল করিম পাটোয়ারীর চার গুদামে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ৫৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। এ ঘটনায় ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
' একইভাবে গত তিন দিনে দেশের সাত জেলায় অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই হাজার লিটার সায়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে এসব তেল মজুতের দায়ে মজুতদার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চার লাখ ট
াকারও বেশি জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও সয়াবিন তেল মজুতদারদের দমন করা যাচ্ছে না।'
'' ভোজ্যতেল মজুতদারদের বিরুদ্ধে মামলা হবে ফৌজদারি আইনে ''
* জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তা আইনে আছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তারপরও এই আইন অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব (জরিমানা) আমরা মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের মজুতদারি ঠেকাতে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। এ জন্য বুধবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা এবং সংশ্নিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত সভা করে মজুতদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি বৈঠকের পর থেকেই কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মজুতদারদের বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি মামলা করতে পারব না। এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অন্য যেসব আইন আছে সে অনুযায়ী মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
* ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(১)-এ বলা হয়েছে, 'মজুতদারি অথবা কালোবাজারের কারবারের অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হইলে তিনি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এবং তাহাকে জরিমানাও করা যাইবে। তবে শর্ত থাকে যে, মজুতদারির অপরাধের ক্ষেত্রে, ওই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করিতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্যবিধ লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুত করিয়াছেন, তবে তিনি তিন মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং তাহাকে অর্থ দণ্ডও করা যাইবে।'
* ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, 'বিশেষ ক্ষমতা আইন অথবা দণ্ডবিধির আওতায় মজুতদারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। মজুতদারি সেটা সয়াবিন তেল বা অন্য যে কোনো পণ্য হোক; এটাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। কারণ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের বিচারের সুযোগ নেই।' তার মতে, ভোক্তা অধিদপ্তর সায়বিন তেলের মজুতদারি ঠেকাতে চেষ্টা করছে। তারা যখন অপরাধীদের শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছে তখন অন্যদের জন্য ভিন্ন বার্তা দেয়। তাই অপরাধের ধরন অনুযায়ী সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অথবা বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা সমীচীন হবে।
' এদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ নিয়ে ভিন্নমত বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিকের। তিনি বলেন, "যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট ও খাদ্যদ্রব্যের অভাবজনিত বিশেষ পরিস্থিতি ও অন্যান্য প্রেক্ষাপটে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ প্রণীত হয়েছিল। তখন কালোবাজারি ও খাদ্যমজুদের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করার জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কঠোরতম শাস্তির বিধান রাখা হয়। তাই বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছু পণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে এই কঠিন আইনে (বিশেষ ক্ষমতা) প্রয়োগ 'মশা মারতে কামান দাগার মতো' হতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির অন্য ধারায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।'
* বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে শাহ্দীন মালিক বলেন, 'খাদ্যপণ্য আমদানির বিষয়টি গুটিকয়েক বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। ফলে বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই এবং তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরবরাহ মূল্যের ওপর ইচ্ছেমাফিক মুনাফা করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হবে সায়বিন তেলসহ পণ্য আমদানির ও বাজারজাতের বিষয়টি গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর কবল থেকে মুক্ত করে অন্য ব্যবসায়ীদের আমদানিতে প্রণোদনা বা বিশেষ ছাড় দেওয়া। এতে বাজারে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকবে।