প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: ' ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে মুঠোবাঁধা ধান ডাঙায় তুলছেন যশোরের কৃষকরা।
'ধান নিয়ে খুবই বিপদে আছি। গেল মৌসুমে মসুরি লাগিয়েছিলাম দেড় বিঘায়। বৃষ্টিতে তলিয়ে সব নষ্ট হয়ে গেল। এবার তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করলাম; একই অবস্থা। ধান-বিচলি সবই শেষ। এখন সার-সেচের টাকা কীভাবে শোধ করব? সব মিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি। দুই চোখে অন্ধকার দেখি। '
* বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর শহরতলির তফসিডাঙ্গা মাঠে আসানির প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে মুঠোবাঁধা ধান ডাঙায় আনার সময় কৃষক নজরুল শেখ আক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত এই কৃষকের বাড়ি সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের মালঞ্চী গ্রামে।
নজরুল শেখ জানান, 'ধান ভালো হয়েছিল। পাকা ধান প্রায় এক সপ্তাহ আগে কেটে ক্ষেতেই রোদে শুকাতে দিয়েছিলাম। কিন্তু ঝড়-বাদল শুরু হওয়ায় কাটা ধান আর বাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। এখন ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে। কাটা ধান ভাসছে। ধানগাছ পচে যাচ্ছে। অনেক ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। খুবই বিপদে আছি।'
' শুধু নজরুল শেখ নন, এমন বিপদে আছেন যশোরের আট উপজেলার আরও অনেক কৃষক। কয়েকজন কৃষক জানান, ঈদের দিন থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয় জেলাটিতে। এরপর টানা দু'দিন কড়া তাপদাহের পর গেল পাঁচ দিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝড় বইছে। বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাসে জেলার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।'
* যশোর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত পাঁচ দিনে যশোরে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর
্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমে কেটে রাখা পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে।
' কৃষকদের অভিযোগ, ফসল রক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেও বৃষ্টিতে মিলছে না শ্রমিক। এতে ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে ধান। পানিতে ডুবে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন। মনিরামপুর, চৌগাছা, শার্শা ও সদর উপজেলায় বৃষ্টিতে বেশিরভাগই ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।'
* মনিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন এবার সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের সব ধান পেকে গেছে। তিনি সাড়ে চার বিঘা জমির ধান কেটে ক্ষেতে শুকাতে দিয়েছিলেন। তিন দিনের বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে প্রায় এক হাত পানি জমে গেছে। তিনি বলেন, ক্ষেতে কোথাও এক হাত আবার কোথাও প্রায় হাঁটুপানি। ক্ষেতে বিছিয়ে দেওয়া ধানগাছ পচে গেছে। ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। পানিতে ভিজে ধানের অঙ্কুরোদ্গম শুরু হয়েছে। বেশি টাকা দিয়েও কোনো শ্রমিক পাচ্ছি না। খুব ক্ষতির মুখে পড়েছি।
'' মাঠের পানিতেই ভাসছে কাটা ধান ''
* ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, চার বিঘা ধানের মধ্যে ১০ কাঠা জমির ধান বাড়িতে এনেছি। বাকি ধান মাঠে ভিজছে। বিচালি হবে না, আঁটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর মাঠে এক বিঘা জমির ধান কাটা ছিল। সেগুলো বাড়ি আনার জন্য স্ত্রীসহ মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। রাস্তার ওপরে শুকিয়ে তারপর বাড়ি আনতে হবে বলে তারা জানান। ইজ্জেত আলী ও জিয়াউর রহমানকে ধানের আঁটি আনতে দেখা যায়। তারা জানান, জমিতে পানি জমে আছে। আবার ধান পেকে গেছে। যদি পানি শুকানোর জন্য অপেক্ষা করি, তাহলে ধান ঝরে যাবে।
' কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন। বুধবার পর্যন্ত ৯৫ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ জমির ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বৃষ্টিতে ক্ষেতে কেটে রাখা ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। ধানের অঙ্কুরোদ্গম শুরু হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের দাম কম হবে। তবে আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।'